সাধনার অন্তরায় ও মার

মার কি?
মানুষকে মারে বলে মার। বৌদ্ধ মতে মার , হিন্দু মতে শনি, ইসলাম মতে শয়তান। মারের কাজ হলো অকুশল কর্ম, অজ্ঞানমূলক কর্ম করতে বাধ্য করা। মার পুণ‍্য কর্ম সম্পাদনে বাধা দেয়, দু:খ মুক্তিতে বাধা দেয় । মার কাউকে সহজে দু:খ হতে মুক্ত হতে দেয় না।

তিন মার কন্যা ও তাদের স্বভাব:
মার কন‍্যা তিনজনের নাম হলো ১) রতি, ২) অরতি, ৩) তৃঞ্চা

১) রতির স্বভাব: অনুরাগ ও আসক্তি।

২) অরতির স্বভাব: হিংসা , ঘৃণা ও ক্রোধ ইত্যাদি ।

৩) তৃঞ্চার স্বভাব: বাসনা , আকাঙ্ক্ষা ও ভোগেচ্ছা।

মার রাজকে পরাজিত করার দশটি অস্ত্রবল কি?

সিদ্ধার্থ দশটি অস্ত্র বল দ্বারা মার রাজকে পরাজিত করেন। যথা : – ১) দান , ২) শীল , ৩) সাহস, ৪) ধৈর্য্য, ৫) সত‍্য, ৬) সিদ্ধান্ত, ৭) মৈত্রী, ৮) সমজ্ঞান, ৯) নীতি এবং ১০) নিষ্ঠা।

পাঁচ প্রকার সাধনার অন্তরায় কি?

1. ক্লেশান্তরায়:

লোভ, দ্বেষ, মোহ , মান, দৃষ্টি, সন্দেহ, স্ত‍্যান, ঔদ্ধত্য, অহ্রী( লজ্জাহীনতা) ও অনপত্রপা ( ভয়হীনতা) এই দশবিধ ক্লেশ থেকে উৎপন্ন হয় বলে অহেতুক দৃষ্টি, অক্রিয়াদৃষ্টি ও নাস্তিক দৃষ্টির নাম ক্লেশান্তরায়। অন্তরের ক্লেশের প্রাবল‍্যহেতু মানুষ মনে করে এ জগতে স্থাবর-জঙ্গম, সম্পদ , যতপ্রাণী, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রাদি জাগতিক সব পদার্থের সৃষ্টির মূলে কোন হেতু নেই, প্রত‍্যয় নেই।কোন ইচ্ছাময়ের ইচ্ছা শক্তিতেই সব পদার্থের সৃষ্টি ও বিলয় ঘটে থাকে। হেতু এবং প্রত‍্যয় সম্পর্কে অবিশ্বাস সূচক ধারণাকে অহেতুক দৃষ্টি বলে। মানুষ মনে করে এ জগতে দান, শীল ও ভাবনা বলতে কোনরুপ কুশল কর্ম কিংবা প্রাণী হিংসা, চুরি, ব‍্যভিচার , মিথ্যা, নেশাপান বলতে কোনরুপ অকুশল কর্ম নেই। কুশলাকুশল কর্মের ফল বলতে কিছু নেই।যা কিছু করা যায়- করার সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু নি:শেষ হয়ে যায় । সংক্ষেপে কর্ম ও ফলে অবিশ্বাস সূচক এরুপ ধারণাকে অক্রিয় দৃষ্টি বলে। মানুষ মনে করে , ইহজন্মে কুশলাকুশল কর্ম করা হলে ও ভবিষ্যৎ জন্মে সেগুলির কোন বিপাক ফলবে না।অতীত কর্মের কোনরুপ ফল বর্তমান জন্মে সংক্রামিত হয় না অর্থাৎ অতীত অনাগত জন্মে অবিশ্বাস সূচক ধারণাকে নাস্তিক দৃষ্টি বলে। ক্লেশের অতিরিক্ত তারণায় মানুষের অন্তরে এরুপ ধারণা জন্মে ।

2. বিপাকান্তরায়:

অকুশল অহেতুক বিপাক “ উপেক্ষা সহগত সন্তীরণ চিত্ত।” কুশল অহেতুক বিপাক “উপেক্ষা সহগত সন্তীরণ চিত্ত” এবং কামাবচর শোভন চিত্তের চার প্রকার জ্ঞান বিপ্রযুক্ত দ্বিহেতুক বিপাক চিত্ত, এই ছয় প্রকার বিপাক চিত্তের অন্যতম চিত্তে যাদের জন্ম তাদের পক্ষে ইহ জীবনে উন্নত জ্ঞান বা মার্গফল লাভ সম্ভবপর নহে বলে তারা বিপাকান্তরায়।

3. কর্মান্তরায়:

মাতৃহত‍্যা, পিতৃহত‍্যা , অর্হৎ হত‍্যা , দ্বেষ চিত্তে বুদ্ধের দেহ হতে রক্তপাত ও সংঘভেদ এই সকল কর্ম স্বর্গ মোক্ষের বিঘ্ন বলে সেসব কর্মান্তরায়।

4. আজ্ঞাতিক্রমান্তরায়:

বিনয় শাস্ত্রে ভিক্ষু ভিক্ষুণীর জন‍্য আদেশ নিষেধ সূচক যে সকল নীতি উদ্ধৃত আছে তা লঙ্ঘন করাকে আজ্ঞাতিক্রমান্তরায় বলে।

5. উপবাদান্তরায়:

মাতা-পিতা , আচার্য-উপাধ‍্যায়, গুরু স্থানীয় শীলবান ধার্মিক লোকের প্রতি বিশেষ করে আর্য পুরুষের প্রতি নিন্দা, অপবাদ করা উপবাদান্তরায়।এই সকল কর্ম সাধনার বিঘ্ন স্বরুপ।

যার জীবনে এই সকল অন্তরায়কর কর্মের প্রভাব নিহিত আছে তার সাধন পথে প্রগতি অসম্ভব। এই জন‍্য তারা অন্তরায় বা আবরণ নামে অভিহিত। ভাবনা প্রয়াসীর জীবন এ সকল অন্তরায় থেকে সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ মুক্ত কিনা তা লক্ষ‍্য করার বিষয়। অন্তরায়গ্রস্ত হলে সাধন পথে অগ্রগতি পদে পদে ব‍্যাহত হয়। পক্ষান্তরে সর্ববিধ অন্তরায় মুক্ত হয়ে ভাবনা ব্রত গ্রহণ বিধেয় ।তাতে অনায়াসে সাফল্য লাভের সমধিক সম্ভাবনা ।আর প্রতিকার সাপেক্ষ অন্তরায় গুলোকে পূর্বেই সংশোধন করে নিতে পারলে অনেক উপকৃত হওয়া যায়। কেননা প্রতিকারাতীত অন্তরায় থাকলে অনেক সময় সকল প্রচেষ্টা সর্বতোভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়। কাজেই উদ্দেশ্যের সাফল্য লাভের পক্ষে সকলদিকে আনুকূল্য বিবেচনার পর ব্রত গ্রহণ বাঞ্জনীয়।