১)জন্ম নিয়তই দু:খ এবং
২) মিথ্যে ধারণা প্রসূত অহমিকা পরিত্যাগের মাঝে পরম সুখ।
মানবজাতির সমস্যা সমূহ হয় বাহিরের অন্য কেহ বা অন্য কিছু নতুবা , নিজে আত্মক্লেশ দ্বারা আরোপিত হয়ে দু:খ সমস্যায় পর্যবসিত হয়েছে। কেহ দু:খকে কামনা করে না বলে এটা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের প্রাথমিক সমস্যা। উক্ত দুটো বাণীতে বুদ্ধ দু:খকে ‘জন্মগ্রহণ’ করার কারণ বলে প্রতীয়মান করেন।অর্থাৎ জন্ম নিয়তই দু:খ; এবং তিনি সুখকে মিথ্যে ধারণা প্রসূত অহমিকার বিলোপসাধন বলে প্রতীয়মান করেন।
এখানে আমাদের মধ্যে অনেকেই ‘জন্ম’ বলতে মাতৃগর্ভ থেকে সরাসরি সশরীরে ভূমিষ্ট হওয়া মনে করি। কিন্তু তিনি তা বলেননি।তিনি যদি তা বুঝাতেন তাহলে মিথ্যে ধারণাপ্রসূত অহমিকা পরিত্যাগের মাঝে পরম সুখ এ কথা বলতেন না।এ বাণী পরিষ্কাররুপে নির্দেশ করে যে , দু:খ সমূহের কারণ মিথ্যে ধারণা প্রসূত অহমিকা থেকে।এই মিথ্যে ধারণা অহমিকার মূলোৎপাটনের মধ্য দিয়ে লাভ করা যায় পরম সুখ।
তাই ‘দু:খ’ প্রকৃতপক্ষে মিথ্যে ধারণা প্রসূত “আমি”, “আমি হই”, “আমার আছে” এর মধ্যেই নিহিত। তাহলে পরিষ্কারভাবে আমরা বলতে পারি “জন্ম” অহমিকাবোধের উৎপত্তি ছাড়া কিছুই নয়।
অহমিকা বা অহংকার সর্বমোট নয় প্রকার। যথা (১) অমি শ্রেষ্ঠের শ্রেষ্ঠ, (২) আমি শ্রেষ্ঠের সদৃশ, (৩) আমি শ্রেষ্ঠ, অপেক্ষা হীন, (৪) আমি সদৃশের শ্রেষ্ঠ, (৫) আমি সদৃশের সদৃশ, (৬) আমি সদৃশ অপেক্ষা হীন, (৭) আমি অধমের উত্তম, (৮) আমি অধমের সদৃশ, (৯) আমি অধম অপেক্ষা অধম। এই ৯ প্রকার অহংকার ধ্বংস করলে, ১০৮ প্রকার তৃষ্ণা ক্ষয় করলে, ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি ছিন্ন করলে দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়া যায়, অর্হত্ত্ব লাভ করা যায়। ৯ প্রকার অহংকার থাকলে দুঃখ পেতে হয়, ১০৮ প্রকার তৃষ্ণা থাকলে দুঃখ পেতে হয়, ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি থাকলে দুঃখ পেতে হয়। সে অবস্থায় কিছুতেই দুঃখ থেকে মুক্ত হওয়া যায় না, অর্হত্ত্ব লাভ করা যায় না। অর্হত্ত্ব লাভ হলে ৯ প্রকার অহংকার, ১০৮ প্রকার তৃষ্ণা, ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি থাকে না। তাই অর্হৎগণ পরম সুখে অবস্থান করেন। বর্তমানে আমরা কেন দুঃখ পাচ্ছি? ৯ প্রকার অহংকারের কারণে, ১০৮ প্রকার তৃষ্ণার কারণে, ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টির কারণে দুঃখ পাচ্ছি । সেই দুঃখ থেকে মুক্ত হতে চাইলে আমাদের সামনে একটি মাত্র পথ রয়েছে। পথটি হলো ৯ প্রকার অহংকার ধ্বংস করা, ১০৮ প্রকার তৃষ্ণা ধ্বংস করা, ৬২ প্রকার মিথ্যাদৃষ্টি ছিন্ন করা।
পরম পূজ্য বনভান্তে বলেন –
“উঁচু নিচু সমান নিয়ে পৃথিবী গঠিত,
ইহা হলো ধরার ধর্ম ভূগোলে পঠিত।”
লোকের মধ্যে তাহা আছে নিত্য দেখা যায়,
কেহ ধনী কেহ গরীব কেহ সমপর্যায়
আমি আমি করে সবে ‘আমি’অর্থ কি?
আমি’র অর্থ জানলে লোকে নিজকে বলে ছি:!
ধনে জনে মানে আমি কি আছে তোর?
আমি জ্যেষ্ঠ আমি শ্রেষ্ঠ জুড়ি নাই মোর।
আমি গরিব আমি ছোট আমি হীন মান,
আমি নীচ জানে সবে করে হীন জ্ঞান।
আমি আছি তোমার সমান ধনে মানে জনে,
আমার সমান সবে আছে বলি মনে মনে।
আমি নামে কিছু নাই আমিত্বের আকর,
আয়ু শেষে হয় শুধু যমের চাকর।
আমি আমি ত্যাগ কর তার নাম আমিত্ব,
আমির খোলস ফেললে পাবে অচ্যুত মহত্ব ।।
(বি: দ্রষ্টব্য: আমিত্ব কে বিস্তারিত জানার জন্য বাঁশখালীর জন্মজাত বুড্ডিষ্ট স্কলার ও কবি ,সাবেক ব্যাংকার বাবু মনীদ্র লাল বড়ুয়ার অনুদিত “আমিত্বে বিপত্তি “ বইটি একটি উৎকৃষ্ট গ্রন্থ।)


