মার হল মনের কুমতি , কাম লালসার প্রলুব্ধকারী শয়তান।পঞ্চমার হলো –
১) দেবপুত্রমার,
২)অভিসংস্কার -মার,
৩) ক্লেশ মার,
৪) স্কন্ধ-মার ,
৫)মৃত্যু-মার প্রভৃতি বোঝায়।
১) দেবপুত্রমার,
২)অভিসংস্কার -মার,
৩) ক্লেশ মার,
৪) স্কন্ধ-মার ,
৫)মৃত্যু-মার প্রভৃতি বোঝায়।
১) দেবপুত্র -মার:
দেবপুত্র মার হল পরনির্মিত বশবর্তী স্বর্গের অধিপতি শক্তির দেবতাই দেবপুত্রমার। আমরা সকলেই জানি সিদ্ধার্থ গৌতম গয়ার মহাবোধিমূলে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় এই দেবপুত্র মার রাজাকে পরাভূত করে বুদ্ধত্ব বা বোধিজ্ঞান লাভে সক্ষম হন।কোন সত্ত্বই যাতে কামলোকের নাগালের বাইরে গিয়ে নির্বাণ লাভ করতে না পারে সেজন্য বশবর্তী দেবপুত্রমার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রুপে ভাবনা অনুশীলনকারীদেরকে নানাভাবে প্রলোভিত করে, ভয় দেখায় এবং ধ্যান থেকে চ্যুত করতে চায়। দু:খ মুক্তির নির্বাণ লাভ করার প্রয়োজন নেই, সুখ ভোগের মাধ্যমে সংসার চক্রে আবদ্ধ রাখাই বশবর্তী দেবপুত্র মারের কাজ।
২) অভিসংস্কার মার:
অভিসংস্কার মার ‘ভোগ চেতনা মার’ নামে পরিচিত । কুম্ভকার কাদামাটিকে পরিমর্দন করে ঘট প্রস্তুত করে।অভিসংস্কার মার ও সত্ত্বগণকে কামলোক, রুপলোক ও অরুপলোকে জন্মগ্রহণ করায় ।এ মারের প্রভাবে সত্ত্বগণ জন্ম-জন্মান্তরকাল ব্যাপী দু:খ ভোগ করে।উৎপন্ন সংস্কার ( কর্ম) সমূহ চিত্তের মধ্যে বদ্ধমূল স্থায়ী করে দেওয়া এই মারের কাজ।
অভি এক অর্থে অতিরিক্ত । সুতরাং অভিসংস্কার বলতে ইহ জন্মের সংস্কার ছাড়া ও অতীত অতীত জন্মের অতিরিক্ত সংস্কার গুলিকে বোঝায় । ধ্যানের সময় উপচার সমাধি আরম্ভ হলে পূর্বের সংস্কারগুলি দেখা দেয়, তা অনন্ত জন্মের ও হতে পারে। সেগুলি চিত্ত সন্ততিতে সুপ্তাকারে সঞ্চিত ছিল।যেমন , পূর্বে ছিল না এমন কিছু কিছু উপসর্গারুপ তীব্র দু:খ বা ব্যথা, বেদনা ভাবনাকালে উদ্রেক হতে দেখা যায়।কোন কোন ধ্যানী কাঁদতে থাকেন, আবার অনেককেই দারুণভাবে হাসতে ও দেখা যায়। অনেকেই কখনো কখনো মারামারি করবার উদ্দ্যোগ নিয়ে হাত পা ছুঁড়তে থাকেন।কোন সময় সাষ্টাঙ্গে বন্দনা করতে ও দেখা যায়।আবার অনেক সময় আগে উপলব্ধি করা হয়নি এরুপ শারীরিক প্রতিক্রিয়া ও আরম্ভ হয়ে যায় ।
প্রসঙ্গত: এক সময় একজন শ্রেষ্ঠী ভগবান বুদ্ধের নিকট ক্ষীণাস্রব ভিক্ষুদের আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন ।বুদ্ধ শ্রেষ্ঠীকে নির্দিষ্ট ভিক্ষু প্রবরদের নিমন্ত্রণ করতে বললেন । শ্রেষ্ঠী তাঁদের নিকট গিয়ে দেখতে পেলেন যে কোন কোন ভিক্ষু মাটিতে আঁচর কাটছেন, কেউ বা গাছের ডাল দোলাচ্ছেন আবার কেউ বা আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছেন ।এতে শ্রেষ্ঠীর মনে ভিক্ষুগণ ক্ষীণাস্রব কিনা সন্দেহের সঞ্চার হয়। শ্রেষ্ঠী বুদ্ধের নিকট হতাশ হয়ে ফিরে গেলে তিনি শ্রেষ্ঠীর মনোভাব বুঝতে পেরে বললেন উক্ত ভিক্ষু প্রবরেরা ক্ষীণাস্রব( অর্হৎ)। পূর্ব জন্মে তাঁরা কেউ বা নক্ষত্রবিদ, কেউ বা বানর আবার কেউ বা কেঁচো ছিলেন বলে সংস্কারবশে সেরুপ স্বভাব স্বভাব ব্যক্ত করছিলেন।প্রকৃতপক্ষে তাঁরা সবাই অর্হৎ। সে কারণে যোগীগণ ও পূর্ব সংস্কার প্রভাবে অনুরুপ শারীরিক প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হলে স্মৃতি ভাবনার দ্বারা সে সে প্রতিক্রিয়া প্রতিহত করতে হবে। অথবা এরূপ আলম্বন দেখা দিলে, আচার্যের নির্দেশ অনুসারে দক্ষতার সাথে স্মৃতি ভাবনায় জেনে জেনে উক্ত উপক্লেশ সমূহ নিরসন করে ক্রমান্বয়ে অন্তর্দৃষ্টি সহকারে ধ্যানের গভীরতম অবস্থায় পৌঁছতে হবে ।
৩) ক্লেশ মার:
জন্ম-জন্মান্তর পরিক্রমার পথে সত্ত্বগণকে দু:খ বা কষ্ট দেয় বলে নিম্নলিখিত কারণগুলিকে ক্লেশ বলা হয়েছে । যে সকল জৈব উপাদান মানুষের চিত্ত কলুষিত, পরিতপ্ত, ব্যাধিগ্রস্থ , মলিন, নীচ, হীন ও ঘৃণিত করে সে সবই ক্লেশ। এগুলি দশ প্রকার, যথা- ১) লোভ, ২) দ্বেষ, ৩) মোহ, ৪) মান, ৫) মিথ্যাদৃষ্টি, ৬) বিচিকিচ্ছা , ৭) স্ত্যান-মিদ্ধ, ৮) ঔদ্ধত্য, ৯) অহ্রী ও ১০) অনপত্রপা ।
এগুলি চিত্ত সন্ততিতে উৎপন্ন হয়ে চিত্তের অকুশল বৃত্তিকে সুপ্তভাবে থেকে ভারী করে এবং দান, শীল ও ভাবনা কাজে বাধা প্রদান করে বলে ক্লেশ বলা হয়।এরা নীবরণ আকারে ও ধ্যানে বাধা সৃষ্টি করে।
এই মার মানুষ বা সত্ত্বগণের চিত্তকে নানাবিধ অপকর্মে
নিয়োজিত করে, চারি অপায়ে নিক্ষিপ্ত করে এবং মহাদু:খে পতিত করায় । ক্লেশ মারের কারণে সত্ত্বগণ বিভ্রান্ত হয়ে নানা প্রকার পাপ কর্মে লিপ্ত হয় ।যার কারণে তারা ইহ জীবনে মহাদু:খ ভোগ করে এবং মৃত্যুর পর নরক, তির্যক, প্রেত ও অসুর ভূমিতে জন্মগ্রহণ করে অনন্তকাল ধরে অপায় দু:খ ভোগ করে।
৪) স্কন্ধ মার:
রুপ, বেদনা, সংজ্ঞা , সংস্কার ও বিজ্ঞানকে স্কন্ধ মার বলে।জীবদেহ পঞ্চস্কন্ধ সমন্বয়ে গঠিত । এ পঞ্চস্কন্ধের কারণে সত্ত্বগণ বিরামহীন ভাবে উৎপন্ন ( জন্ম) হচ্ছে । এই জন্ম বা দেহই দু:খের আগার বলে তা মার নামে পরিচিত । এ জন্মে শীল ভঙ্গের কারণে কতগুলি কায়িক, বাচনিক ও মানসিক কু-অভ্যাস রপ্ত হয়ে থাকে । যেমন, বাজে কথা বলা, হাত পা নাড়া বা মাথা দোলাতে কথা বলা, চঞ্চল স্বভাবের কারণে নানা অঙ্গ-ভঙ্গি ব্যক্ত করা, বিনা কারণে শরীর কুণ্ডায়ণ করা, আর ও কত কি!
৫) মৃত্যু মার:
মৃত্যুকে মার বলা হয় এই কারণে, যে যোগী যখন অত্যন্ত দক্ষতা ও একাগ্রতার সাথে ধ্যানানুশীলন করতে করতে ক্রমশ: গভীরে প্রবেশ করতে যাবেন অর্থাৎ যেন পরিকর্ম -ধ্যান সমাপ্ত করে গোত্রভূ ধ্যানে প্রবিষ্ট হবেন, এমতাবস্থায় তাঁর আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁকে মৃত্যু বরণ করতে হয়।এজন্য মৃত্যুকে মার রুপে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই মৃত্যুরুপী মার যতকাল পর্যন্ত সত্ত্বগণ নির্বাণ রাজ্যে প্রবেশ না করে তৎকাল পর্যন্ত সত্ত্বগণকে গ্রাস করে থাকে।

